কম্পিউটার ভাইরাস কি
আমরা যারা কম্পিউটার বা মাল্টিমিডিয়া ডিভাইস এর সঙ্গে যুক্ত তাদের সব সময় মাথায় রাখতে হয় কম্পিউটার ভাইরাসের ব্যাপারটি। কিন্তু কি এই কম্পিউটার ভাইরাস বা কম্পিউটার ভাইরাস বলতে আমরা কি বুঝি।
কম্পিউটার ভাইরাস বিষয়টি কি সত্যি কারের ভাইরাসের মতো কাজ করে বা কম্পিউটার ভাইরাস কিভাবে আমাদের ক্ষতি করে থাকে এবং তা যদি সত্যি ক্ষতি করে থাকে তবে কম্পিউটার ভাইরাসের প্রতিরোধের উপায় গুলি কি কি। এই সকল প্রশ্নগুলির উত্তর অবশ্যই আমাদের জানা খুবই জরুরী।
যদি আমার মত আপনাদের মনে এই বিষয়টি নিয়ে এরকম প্রশ্ন থাকে তবে অবশ্যই এই আর্টিকেলটি আপনাদের সেই প্রশ্নের উত্তর দেবে। কারণ এই আর্টিকেলটির মধ্য দিয়ে আমি কম্পিউটার ভাইরাস সম্পর্কে যতগুলো প্রশ্ন আপনাদের মাথায় আছে তা উত্তর দেব।
সুতরাং কম্পিউটার ভাইরাস কি বা কিভাবে ছড়ায় এবং এর প্রতিরোধের উপায় কি এইসকল বিষয় গুলি এবং সাথে কয়েক প্রকার কম্পিউটার ভাইরাস এর নাম ও বিষয় সম্পর্কে জানতে হলে অবশ্যই আপনি এই আর্টিকেলটি প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত পড়ুন।
কম্পিউটার ভাইরাস কি ?
1986 সালের প্রথম ব্রেইন নামে একটি কম্পিউটার ভাইরাসের দেখা মেলে। আসলে এটি ছিল একটি MS-Dos অপারেটিং সিস্টেম যুক্ত কম্পিউটারের একটি ভাইরাস।
এরপর থেকে শুরু হয় কম্পিউটার ভাইরাস নিয়ে নানান রকম গবেষণা এবং কি এই কম্পিউটার ভাইরাস প্রথম দিকের মানুষ জানতে পারিনি। যদিও এই বিষয়টি আজো কম বেশি চর্চিত হয়ে থাকে তবুও আমরা অনেকেই জানিনা আসলেই কম্পিউটার ভাইরাস কি।
চলুন তাহলে এখন দেখিনি যে আসলে কম্পিউটার ভাইরাস বলতে আমরা কি বুঝি!
কম্পিউটার ভাইরাস বলতে আমরা বুঝি যেমন ঠিক মানবদেহে কোন ভাইরাস আক্রমণ করলে মানুষের শরীরে ধীরে ধীরে দুর্বল হয়ে পড়ে ঠিক একই রকম ভাবে আমাদের কম্পিউটার বা ল্যাপটপে যদি এমন কোনো অবস্থান করে তবে ধীরে ধীরে আমাদের কম্পিউটারটি দুর্বল হয়ে পড়ে।
কিন্তু একথা বললে কি কম্পিউটার ভাইরাসের সঠিক ধারণা বা কাকে বলে বিষয়টি বোঝা যায় ? না যায় না কারণ কম্পিউটার ভাইরাস হলো কয়েকটি বিশাল কোডিং এর সংক্ষিপ্ত রূপ যা একটি বৃহৎ কাজ করতে সক্ষম।
সংক্ষিপ্ত কয়েকটি কোডিংয়ের বৃহত্তর সমন্বয় যা ধীরে ধীরে নিজেকে প্রতিলিপি তৈরি করে কোন ডিভাইস বা যন্ত্র কে মুহূর্তের মধ্যে শেষ করে দিতে পারে তাই হলো কম্পিউটার ভাইরাস।
কম্পিউটার ভাইরাস মূলত কোন অপারেটিং সিস্টেম তৈরি করার মত কোডিং-এর মারফত তৈরি করা হয় এবং যখনি সেই ভাইরাসটি কম্পিউটারের অপারেটিং সিস্টেমে প্রবেশ করে তখন অপারেটিং সিস্টেমের মধ্যে নানান ধরনের লুপ তৈরি করে।
আর একবার যদি কম্পিউটারের অপারেটিং সিস্টেমের মধ্যে ওই ভাইরাসটি তার প্রতিলিপি তৈরি করে লাভ করতে সক্ষম হয় তবে খুব দ্রুত ওই কম্পিউটারকে ভাইরাস টি শেষ করে দিতে পারে।
তাহলে আশা করি এবার বুঝতে পারলেন যে কম্পিউটার ভাইরাস কি। আসলে কম্পিউটার ভাইরাস হলো কম্পিউটারের বিরোধী এমন একটি সংক্ষিপ্ত কোডিং এর সমন্বয়ে যা কম্পিউটার প্রোগ্রাম কে শেষ করে দিতে পারে।
কম্পিউটার ভাইরাস কি ব্যাখ্যা করো
কম্পিউটার ভাইরাস কি এর ব্যাখ্যা বিষয়টি বোঝাতে গেলে বুঝতে হবে কম্পিউটার ভাইরাস কোন অন্য রূপ থেকে তৈরি হয়ে আসে না। মানবদেহে যেমন ভাইরাস অ্যাটাক করে ঠিক একই রকম ভাবে এই কম্পিউটারের ভাইরাস গুলি কম্পিউটারকে বা কম্পিউটারের বিভিন্ন প্রোগ্রাম কে এটাক করে থাকে।
আমরা যেমন কোন প্রোগ্রাম বা কোডিং করে কোন সফটওয়্যার তৈরি করি ঠিক একই রকমভাবে কোডিং করে এই ধরনের কম্পিউটার ভাইরাস গুলি তৈরি করা হয়। যার মুখ্য উদ্দেশ্য হল কম্পিউটার এর মধ্যে ঢুকে তার অপারেটিং সিস্টেম ও বিভিন্ন প্রোগ্রামকে ক্ষতিগ্রস্ত করা।
কম্পিউটার ভাইরাস গুলি সফটওয়্যার ডেভলপার যারা তারা কোডিং-এর মারফত এগুলি তৈরি করে থাকে। এই ধরনের কঠিন গুলি এমনভাবে তৈরি করা থাকে যা কোন অপারেটিং সিস্টেম ইন্সটল হওয়ার সাথে সাথে নিজেই সমস্ত সিস্টেমটিকে কন্ট্রোল করতে পারে।
সুতরাং আপনার কম্পিউটারে যদি একবার এই ভাইরাস প্রবেশ করে তবে যেকোনো প্রোগ্রামের মধ্য দিয়ে তা অপারেটিং সিস্টেমকে ধীরে ধীরে নিজের আয়ত্বে নিয়ে আসে। আর একবার যখন এই কম্পিউটার ভাইরাস কি নিজের আয়ত্তে সমস্ত প্রোগ্রামটিকে নিয়ে আসে তখন খুব সহজেই নিজের মতো করে এসে চালাতে পারে।
১৯৮৩ সালে পেনসিলভানিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র ফ্রেড কোহেন একটি প্রোগ্রাম তৈরি করে তা মেইনফ্রেম কম্পিউটার প্রবেশ করায় এবং খুব অল্পসময়ের মধ্যে সেই কম্পিউটারটিকে নিজের নিয়ন্ত্রণে নিয়ে আসেন। তার এই প্রোগ্রামটি খুব সহজেই নিজেই নিজের অনুলিপি তৈরি করতে সক্ষম ছিল। এর থেকেই পরবর্তী সময়ে কম্পিউটার ভাইরাস সম্পর্কে ধারণা শুরু হয়।
তাহলে কম্পিউটার ভাইরাসের সম্পর্কে এটা বলা যায় যে কম্পিউটারের অপারেটিং সিস্টেম যেমন অনেকগুলি কোডিংয়ের মাধ্যমে তৈরি করা হয় ঠিক একই রকম ভাবে এই কম্পিউটার ভাইরাস গুলি করে তৈরি করা হয়।
কম্পিউটার ভাইরাস গুলি এর অপারেটিং সিস্টেমের মধ্যে ইন্সটল হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে তা নিজের মতো অনুলিপি তৈরি করে সমস্ত প্রোগ্রামটিকে নিজের কন্ট্রোলে নিয়ে আসে।আর একবার কন্ট্রোলে নিয়ে আসার সঙ্গে সঙ্গে সে নিজের মত সমস্ত প্রোগ্রামটিকে চালাতে শুরু করে।
কম্পিউটার ভাইরাস এর কাজ কি ?
কম্পিউটার ভাইরাস সাধারণত মানবদেহে ছড়ানো ভাইরাস গুলির মত একটি ভাইরাস। মানব দেহে ভাইরাস গুলি রক্ত ও মাংসের মাধ্যমে সমস্ত শরীরে ছড়িয়ে পড়ে ঠিক একই রকম ভাবে কম্পিউটার ভাইরাস গুলি সমস্ত প্রোগ্রামের এবং অপারেটিং সিস্টেমের মাধ্যমে সমস্ত কম্পিউটারে ছড়িয়ে পড়ে।
শুধু তাই নয় কম্পিউটার ভাইরাস গুলি একটি কম্পিউটার থেকে অন্য একটি কম্পিউটারে যাওয়ার ক্ষমতা রাখে। যদি কোন একটি ভাইরাস একটি কম্পিউটার থেকে অন্য কম্পিউটারে কোন রকম ভাবে প্রবেশ করতে পারে তবে আগের কম্পিউটার টির মত নতুন কম্পিউটারটিকে সে নষ্ট করে দিতে পারে।
এবার আসি কম্পিউটার ভাইরাস এর কাজ কি সেই সম্পর্কে, সাধারণত মানবদেহে যে সমস্ত ভাইরাসের আক্রমণ হয় তার যেমন কাজ হলো মানবদেহের ইমিউনিটি শেষ করে দেওয়া ঠিক একই রকম ভাবে কম্পিউটার ভাইরাস গুলির মূল কাজ হয় কম্পিউটারের ইমিউনিটি শেষ করে দেওয়া।
এই কথাটি বললে কম্পিউটার ভাইরাসের কাজ সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়া যায় না কারণ কম্পিউটার ভাইরাসের বিভিন্ন ধরন আছে যেমন, প্রোগ্রাম ভাইরাস, ম্যাক্রো ভাইরাস, রেসিডেন্ট ভাইরাস, ফ্যাট ভাইরাস, বুট ভাইরাস ইত্যাদি।
এই বিভিন্ন প্রকার ভাইরাস গুলির বিভিন্ন প্রকার কার্যক্ষমতা আছে অর্থাৎ এদের প্রত্যেকের কাজগুলি আলাদা আলাদা। এ কথাটি মনে রাখতে হবে এই সকল কম্পিউটার ভাইরাসের কাজগুলি আলাদা আলাদা হয় তার ডেভেলপারের উদ্দেশ্য কে লক্ষ্য করে।
কারণ ডেভলপার অর্থাৎ যে এই কম্পিউটার ভাইরাস তৈরি করেছে সে কোন উদ্দেশ্যে তৈরি করেছে সেই উদ্দেশ্যে এই ভাইরাসটি কাজ করে থাকে। যেমন একটি ভাইরাস কে যদি কোন ডিভাইসের অপারেটিং সিস্টেমকে নষ্ট করার জন্য তৈরি করা হয় তবে সে ওই কাজ করবে।
আবার কোন ভাইরাস কে ডেভলপার যদি এমনভাবে তৈরি করে যে সেই ভাইরাসটি যে ডিভাইসে থাকবে তখন সেই ডিভাইস এর সমস্ত তথ্য ডেভলপারের কাছে নিয়ে আসবে, তখন ওই ভাইরাসটি ওই ভাবেই কাজ করবে।
সুতরাং বুঝা গেল ভাইরাস প্রস্তুতকারীর মানসিকতার উপর ভাইরাসের কাজ নির্ভর করে। তবে সকল ভাইরাস গুলির মূল উদ্দেশ্য থাকে সে যে প্রোগ্রামে ইনস্টল হবে সেই প্রোগ্রামের সবকিছুকে শেষ করে দেবে।
কিছু বড় বড় হ্যাকার এই ধরনের ভাইরাস তৈরি করে থাকে যারা এই সকল কম্পিউটার ভাইরাস থেকে ব্যবহারকারীর বিভিন্ন তথ্য তাদের কাছে নিয়ে ব্যবহারকারীকে ব্ল্যাকমেইল করে ও মুক্তিপণ দাবি করে থাকে।
সুতরাং আশাকরি বুঝতে পারলেন যে কম্পিউটার ভাইরাসের আসল কাজ কি। কম্পিউটার ভাইরাসের আসল কাজ হল প্রস্তুতকারীর মানসিকতার উপর নির্ভর করে কাজ করা।
স্বাভাবিকভাবে যখন কোন কম্পিউটার ভাইরাস দ্বারা আক্রান্ত হয় তখন তাতে প্রচুর পরিমাণে ক্ষতি করে থাকে চলুন এবার দেখে নিই কম্পিউটার ভাইরাস কি কি ক্ষতি করে।
কম্পিউটার ভাইরাস কি কি ক্ষতি করে ?
কম্পিউটার ভাইরাস কি কি ক্ষতি করে তার উত্তরে আবার একথা বলতে হয় যে কম্পিউটারের এই সকল ভাইরাস গুলি যে যে উদ্দেশ্যে তৈরি করা হয় সেই সেই ক্ষতি গুলো করে। অর্থাৎ কম্পিউটার ভাইরাস কম্পিউটারে প্রবেশ করলে তা অনেক রকম ক্ষতি করতে পারে। যেমন
এমন অনেক কম্পিউটার ভাইরাস আছে যা আমাদের কম্পিউটার সিস্টেমে ইনস্টল হওয়ার পর ধীরে ধীরে কম্পিউটারকে স্লো করে দেয় সমস্ত প্রোগ্রামগুলি খুব ধীরে চলতে শুরু করে। এর ফলে আমাদের কম্পিউটারে কোন কাজ করতে খুব সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়।
এমন অনেক কম্পিউটার ভাইরাস আছে যেগুলি আমাদের সিস্টেমে ইনস্টল হওয়ার পর যেকোনো ফাইল বা ডাটা সে নিজের মত করে এনক্রিপ্ট করে ফেলে। এর ফলে সেই ফাইল বা ডেটা আমরা আর ফিরে পাই না।
আবার এমন অনেক ভাইরাস আছে যেগুলি তার প্রস্তুতকারীর ইচ্ছাকে পূরণ করে থাকে। অর্থাৎ আমাদের সিস্টেমে থাকা বিভিন্ন তথ্য তার প্রস্তুতকারী কাছে পৌঁছে দেয়। এর ফলে আমাদের সমস্ত ডেটা কে আমরা হারিয়ে ফেলি। সুতরাং একবার কম্পিউটার ভাইরাস এটাক করার সাথে সাথে আমরা এই সমস্যায় পড়তে পারি।
এমন অনেক ভাইরাস আছে যেগুলি আমাদের কম্পিউটারে প্রবেশ করার সাথে সাথে আমাদের সমস্ত পার্সোনাল বা ব্যক্তিগত তথ্যগুলি সমস্ত ইন্টারনেটে ছড়িয়ে দিতে সক্ষম। এর ফলে যত ব্যক্তিগত তথ্য থাকে তা সমস্ত ইন্টারনেটে ছড়িয়ে পড়ে।
কম্পিউটার ভাইরাস আমাদের বিভিন্ন ছবি বা ফটো ইমেইল ব্যাংকিং তথ্য সবকিছু আমাদের কাছ থেকে কেড়ে নিতে পারে। কারণ আমরা প্রতি মুহূর্তে আমাদের এই সকল তথ্য গুলি কম্পিউটারে সেভ করে রাখি। আর যখন ভাইরাসে অ্যাটাক করে তখন সেই ভাইরাস আমাদের এই সকল তথ্য প্রস্তুতকারীর কাছে পৌঁছে দেয়।
সাধারণত কম্পিউটার ভাইরাস যদি আমাদের কম্পিউটার কে আক্রমণ করে থাকে তবে তা বিভিন্নভাবে ক্ষতি করতে পারে। যেমন কখনো কখনো কিছু ভাইরাস আমাদের হার্ডডিস্ককে নষ্ট করে দেয়।
আবার এমন অনেক ভাইরাস আছে যা আমাদের কম্পিউটারের প্রসেসর কে নষ্ট করে দেয়। যেহেতু এই সকল ভাইরাস কোডিং-এর মাধ্যমে তৈরি করা হয় সেই কারণে খুব সহজে আমাদের অপারেটিং সিস্টেমের সঙ্গে ভাইরাসগুলো মিশে যাই।
আর একবার অপারেটিং সিস্টেমের সঙ্গে মিশে যেতে পারলে তা নিজের মতো করে সমস্ত কম্পিউটারটিকে ওই ভাইরাস চালিয়ে থাকে। সুতরাং ভাইরাস আক্রমণ করলে তা আপনার নিজের হাতের মুঠোয় আর থাকেনা।
কম্পিউটার ভাইরাস কিভাবে ছড়ায় ?
এই বিষয়টি আমাদের জানা অত্যন্ত জরুরী যে কম্পিউটার ভাইরাস কিভাবে ছড়ায়? কারণ আমরা যদি জানতে পারি যে কম্পিউটারে এই ভাইরাস কিভাবে ছড়ায় তাহলে আমরা খুব সহজেই তা প্রতিরোধ করতে পারব।
কম্পিউটারে এই ভাইরাসগুলো ছড়ানোর অনেকরকম মাধ্যম আছে, অর্থাৎ বলে যেতে পারি অনেকগুলি উপায় বা ভাববে এই সকল ভাইরাস গুলি কম্পিউটারে প্রবেশ করে।
যেমন প্রধানত আমরা যখন ইন্টারনেট ব্যবহার করি তখন স্বাভাবিকভাবেই আমরা আমাদের কম্পিউটার বা ল্যাপটপ এ ইমেইল আইডি কে সাইন ইন করে রাখি, এই সকল ইমেইল গুলিতে অনেক প্রকার স্প্যাম ইমেইলপ্রবেশ করে যেগুলি খুললেই একটি কোডিং অটোমেটিক্যালি আমাদের সিস্টেমে ইন্সটল হতে শুরু হয়।
এইভাবে এই সকল কম্পিউটার ভাইরাস গুলি আমাদের কম্পিউটারে ইন্টারনেটের মাধ্যমে বা ই-মেইল এর মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে অর্থাৎ ইমেইল এর মাধ্যমে আমাদের কম্পিউটারে কম্পিউটার ভাইরাস ছড়িয়ে পড়তে পারে।
আবার আমরা যখন কোন ডেটা আমাদের কম্পিউটার থেকে অন্য কোন ডিভাইস এ শেয়ার করি তখন সেই ডিভাইসে যদি কোন ভাইরাস থেকে থাকে তা খুব অতি সহজে আমাদের কম্পিউটারে প্রবেশ করতে পারে, সুতরাং ডাটা শেয়ার করার সময় অবশ্যই তা সাবধানে করা উচিত।
আমরা যখন কোন ওয়েব ব্রাউজার এর মধ্য গিয়ে কিছু খুঁজি তখন এমন এমন কিছু ওয়েবসাইটে আমরা প্রবেশ করি যেখানে আমরা নিজেদের নিয়ন্ত্রণে ওয়েবসাইটটিকে রাখতে পারিনা অর্থাৎ অটোমেটিক্যালি সেই ওয়েবসাইট কিছু পপ-আপ শো করে ডাউনলোড করে ফেলে।
এগুলি অটোমেটিক্যালি ডাউনলোড যদি একবার হয়ে যায় এবং ইন্সটল হতে পারলে তা খুব সহজেই আমাদের কম্পিউটারকে নিয়ন্ত্রণ করে ফেলতে পারে। কারণ এই ধরনের সফটওয়্যার গুলির ভিতরে লুকিয়ে থাকে কম্পিউটার ভাইরাস।
কম্পিউটার ভাইরাস ছড়িয়ে পড়ার আরো অনেক রকম মাধ্যম আছে তবুও যে মাধ্যমগুলি আমরা সচরাচর বুঝতে পারি বা স্বাভাবিক যে মাধ্যমে আমাদের কম্পিউটারে ভাইরাস প্রবেশ করে সেগুলি এখানে আলোচনা করেছি।
কম্পিউটার ভাইরাস প্রতিরোধের উপায়
এতক্ষণ আমরা পড়লাম যে কম্পিউটার ভাইরাস কি এবং তা কিভাবে ক্ষতি করতে পারে আর কি কিভাবে আমাদের কম্পিউটারে কম্পিউটারে ভাইরাস প্রবেশ করতে পারে। ধরুন আপনার কম্পিউটার টিতে কম্পিউটার ভাইরাস প্রবেশ করেছে তাকে কিভাবে আপনি ডিলিট করবেন বাড়াবেন চলুন এবার সেই সম্পর্কে জেনে নিই।
প্রথমত বলি যদি আপনার কম্পিউটার ভাইরাস ইতিমধ্যে প্রবেশ করে থাকে তবে অবশ্যই আপনাকে আপনার সমস্ত যাবতীয় তথ্য গুলি অন্য কোথাও সরিয়ে রাখা প্রয়োজন। ধরুন আপনার প্রয়োজনীয় যত ডকুমেন্ট থাকবে সেগুলিকে কপি করে অন্য কোন ডিভাইসে রাখতে হবে।
কারণ কম্পিউটার ভাইরাসের অন্যতম লক্ষ্য থাকে আমাদের ডকুমেন্টস গুলি কে নষ্ট করে দেওয়া ও সেই ডকুমেন্টস গুলিকে ইন্টারনেটে ছড়িয়ে দেওয়া সুতরাং প্রথমেই এই বিষয়ে নজর দিতে হবে।
দ্বিতীয়তঃ যদি আপনার কম্পিউটারে কম্পিউটার ভাইরাস প্রবেশ করে থাকে তবে অবশ্যই আপনি একটি ভাল গুণ ও মানসম্পন্ন এন্টিভাইরাস ব্যবহার করুন। সাধারণত এই এন্টিভাইরাস গুলি ইন্টারনেট থেকে অনেক রকম দামে কেনা সম্ভব।
সবসময়ই লক্ষ্য রাখবেন যদি আপনি বেশি পরিমাণ ইন্টারনেট আপনার কম্পিউটারে ব্যবহার করে থাকেন তবে সেক্ষেত্রে একটি ভাল এবং উন্নত গুণসম্পন্ন এন্টিভাইরাস আপনার ব্যবহার করা উচিত।
এরপর বলি যদি আপনার কম্পিউটারটি ভাইরাস দ্বারা ইতিমধ্যে আক্রান্ত না হয়ে থাকে তবে তার জন্য কি করনীয় - প্রথমত আপনাকে লক্ষ্য রাখতে হবে আপনি যদি ইন্টারনেটে কাজ করে থাকেন তবে এমন কোন ডাউনলোড সাইটে যাওয়া যাবে না যেখানে কোন কিছু আপনার অনিচ্ছাতেই আপনার কম্পিউটারে ডাউনলোড হতে পারে।
কারণ বেশিরভাগ কম্পিউটার ভাইরাস গুলি এই সমস্ত সাইট থেকেই আমাদের কম্পিউটারে প্রবেশ করে সুতরাং এই সকল সাইটের থেকে আপনাকে অবশ্যই বিরত থাকতে হবে।
এমন কিছু কম্পিউটার সফটওয়্যার আছে যেগুলো আমাদের অনলাইন থেকে কিনে ব্যবহার করতে হয় কিন্তু সেইগুলি ফ্রিতে দেওয়ার নাম করে কিছু ভাইরাস কোন কোন সাইটে লুকিয়ে রাখা হয় যখন আপনি ওই ভাইরাসটি ফ্রিতে ডাউনলোড করে আপনার সে সফটওয়্যার মনে করবেন তখনই আপনার কম্পিউটারে ভাইরাস প্রবেশ করবে।
দ্বিতীয়তঃ আপনি যখন কোন ডেটা অন্য কোন ডিভাইসে শেয়ার করবেন যেভাবেই হোক তখন আপনার লক্ষ্য রাখতে হবে যে আপনি যে ডেটা গুলি নিচ্ছেন বা দিচ্ছেন সেগুলি ভাইরাস দ্বারা আক্রান্ত কিনা।
এর জন্য অবশ্যই প্রয়োজন একটি এন্টিভাইরাস যদি আপনার কম্পিউটারে একটি এন্টিভাইরাস থাকে তবে খুব সহজে সে প্রথমে ওই ডিভাইসটিকে চেক করে নেবে যদি সেখানে কোন লুকিয়ে থাকা ভাইরাস থাকে সে অটোমেটিক ডিটেক্ট করে দেবে।
মনে রাখতে হবে আপনার ইমেইলে আসা এমন অনেক ইমেইল থাকে যা ওপেন করার সঙ্গে সঙ্গে কিছু সফটওয়্যার অটোমেটিক হবে আপনার সিস্টেমে ইন্সটল হতে শুরু করে, অর্থাৎ ইমেইল আইডি থেকে আমাদের কম্পিউটারে কম্পিউটার ভাইরাস প্রবেশ করতে পারে সে বিষয়টি লক্ষ্য রাখতে হবে।
এত সময় ইন্টারনেটে যে সমস্ত বিষয় গুলি বাংলাতে কম্পিউটার ভাইরাস সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হয় তার প্রায় সবগুলো আলোচনা করেছি এখন আমরা আলোচনা করব যে এই কম্পিউটার ভাইরাসের প্রকারভেদ কতগুলি কম্পিউটার ভাইরাস সম্পর্কে।
কম্পিউটার ভাইরাসের প্রকারভেদ
কম্পিউটার ভাইরাস গুলি সাধারণত এক প্রকার ম্যালওয়্যার যা কম্পিউটারের মেমোরিতে প্রবেশ করে নিজেই নিজের অনুলিপি তৈরি করে প্রোগ্রাম কে নষ্ট করে দেয়।
এখন চলুন এই প্রকারের কয়েকটি ভাইরাস সম্পর্কে আমরা জেনে নিই -
Boot Sector Virus :
এই প্রকার ভাইরাস বিভিন্ন প্রকার বুট রেকর্ডকে ইফেক্ট করে। এই সকল কম্পিউটার ভাইরাস কি কম্পিউটার থেকে দূর করা খুব মুশকিল হয়ে পড়ে।
সাধারনত এই সকল ভাইরাস গুলি removable মিডিয়া দিয়ে ছড়িয়ে পড়ে। এই ধরনের কম্পিউটার ভাইরাস গুলি কম্পিউটার থেকে সরানোর জন্য কম্পিউটারকে ফরম্যাট করা প্রয়োজন হয়।
Direct Action Virus :
ডাইরেক্ট একশন ভাইরাস কে কম্পিউটারে নন রেসিডেন্ট ভাইরাস ও বলা হয়ে থাকে। এই কম্পিউটার ভাইরাস টি খুব সহজে কম্পিউটারের মেমোরিতে লুকিয়ে থাকতে পারে।
কিছু কিছু স্পেশাল ফাইল এর মধ্যে গিয়ে এই ভাইরাস লুকিয়ে থাকে ও সেই ফাইলগুলিকে নিজের মতো করে ফেলে। যা খুব সহজেই ভাইরাস গুলি পার্সোনাল যেটাকে নষ্ট করতে সক্ষম।
Resident Virus :
এই কম্পিউটার ভাইরাস কি ও নন রেসিডেন্ট ভাইরাস এর মতো খুব সহজে কম্পিউটারে ইন্সটল হয়ে যায়। এই কারণে খুব সহজে একবার কম্পিউটারে ইন্সটল হয়ে গেলে তাকে খুঁজে বের করা মুশকিল হয়ে পড়ে।
Polimorphic Virus :
কম্পিউটারে যত সকল ভাইরাস প্রবেশ করে তার মধ্যে এই ভাইরাসটি কে চিনে নেওয়া খুবই মুশকিল হয়ে পড়ে, সাধারণত আমরা যেসকল পুরানো এন্টিভাইরাস ব্যবহার করি তারা এই ভাইরাসকে চিনে নিতে মাঝে মাঝে অক্ষম হয়ে পড়ে।
আমাদের কম্পিউটারে থাকা বিভিন্ন এন্টিভাইরাস গুলি যে কোন ভাইরাসের সিগনেচার প্যাটার্ন দেখে চিনে নাই, কিন্তু এই পলিমরফিক ভাইরাস নিজেই নিজের সিগনেচার প্যাটার্ন চেঞ্জ করতে সক্ষম।
Multipartite Virus :
একটি কম্পিউটার ভাইরাস নানান রকম ভাবে আমাদের কম্পিউটারকে ক্ষতি করতে পারে, যে সকল ভাইরাস নানান রকম ফাইল কে নষ্ট করে থাকে এবং সিস্টেমকে ক্ষতি করে থাকে তার মধ্যে multi-party টাইট ভাইরাস হলো অন্যতম।
এই কম্পিউটার ভাইরাস টি একই সঙ্গে বুট সেক্টর ও এক্সিকিউটিভ ফাইলস কে একসঙ্গে ইফেক্ট করে।
Overwrite Virus :
এই কম্পিউটার ভাইরাসটির নাম থেকেই বোঝা যায় যে যদি এই ভাইরাস কম্পিউটারে প্রবেশ করে তবে খুব সহজেই আমাদের ফাইল ও বিভিন্ন ডাটা কে সে নিজের মতো করে ওভাররাইট করা শুরু করে।
সাধারণত এই কম্পিউটার ভাইরাস ইমেইল মারফত আমাদের কম্পিউটারে ছড়িয়ে পড়ে। যেহেতু সরাসরি আমাদের বিভিন্ন ফাইল কে অ্যাটাক করে তাই সেই ফাইলগুলিকে আমাদের ডিলিট করা প্রয়োজন হয়।
File Infectors Virus :
এমন কিছু কম্পিউটার ভাইরাস আছে যারা আমাদের প্রোগ্রাম ফাইল এর সঙ্গে যুক্ত হয়ে পড়ে। এই ধরনের ভাইরাস গুলির মধ্যে অন্যতম - .com / .exe এই সকল ফাইল গুলি।
কম্পিউটারে বিভিন্ন ধরনের ফাইল বা প্রোগ্রাম ডাউনলোড বা ইন্সটল হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে এই ধরনের কম্পিউটার ভাইরাস গুলি কম্পিউটারে প্রবেশ করে আর এই সকল ভাইরাস খুব সহজেই একটি ইমেইল মারফত অন্য কোন ডিভাইস এ প্রবেশ করতে পারে।
Macro Viruses :
এই ধরনের কম্পিউটার ভাইরাস গুলি খুব সহজেই অপারেটিং সিস্টেমের মধ্যে থাকা কিছু অ্যাপ্লিকেশনকে একটা করে। এদের মুখ্য উদ্দেশ্য থাকে বিভিন্ন ম্যাক্রো ল্যাংগুয়েজ কমান্ডকে নষ্ট করা।
এটি একটি আধুনিক কম্পিউটার ভাইরাস যা এমনভাবে তৈরি করা খুব সহজেই নিজের ম্যালিশিয়াস কোড গুলিকে ভেঙে জেনুইন ম্যাক্রো সিকোয়েন্স যুক্ত করতে পারে।
Rootkit Viruses :
এই প্রকার কম্পিউটার ভারত গুলি এক ধরনের ম্যালওয়্যার হয়ে থাকে যা খুব গোপন ভাবে একটি ইল্লিগাল রুটকিট কম্পিউটারে ইন্সটল করে দেয়।
নাম থেকেই বোঝা যায় যে যেকোন সিস্টেমের রুট অর্থাৎ মূল কে খুলে দেয়। এই ভাইরাস কম্পিউটারে প্রবেশ করার সঙ্গে সঙ্গে তা আমাদের সিস্টেমের রুট এ একটি দরজা সৃষ্টি করে যেখান দিয়ে খুব সহজে কম্পিউটার ভারত গুলি প্রবেশ করতে পারে।
যেহেতু এই কম্পিউটার ভাইরাস টি সরাসরি কম্পিউটারে গিয়ে আঘাত করে তাই একে খুঁজে বের করা অনেক ক্ষেত্রে সমস্যা হয়। এই রুটকিট ভাইরাসটি খুব সহজে এন্টিভাইরাস কেউ বাইপাস করে দিতে সক্ষম। একে রুটকিট স্ক্যানার দিয়ে সহজে ধরা যায়।
আমার মতামত : সাধারণত কম্পিউটার ভাইরাস কি এবং তার বিষয়ে যে সকল প্রশ্ন ইন্টারনেটে ছড়িয়ে আছে সেগুলি নিয়ে বাংলাতে আমি উত্তরগুলো দেওয়ার চেষ্টা করেছি।
কম্পিউটার ভাইরাস বিষয়টি কম্পিউটার সফটওয়্যার বা এর অপারেটিং সিস্টেম এর মত একটি জটিল বিষয় সুতরাং কম্পিউটার বা ডেভলপিং সম্পর্কে যথেষ্ট ধারণা না থাকলে বিষয়টি বোঝা কঠিন।
তবুও যে সহজ কয়েকটি বিষয় আমরা জানলে বা মনে রাখলে খুব সহজে কম্পিউটার সফটওয়্যার সম্পর্কে বুঝতে পারবো সেই বিষয়গুলি নিয়ে আমি সহজ-সরল ভাবে আলোচনা করেছি।
আমরা সাধারনত যাকে কম্পিউটার ভাইরাস বলে থাকি তা শুধু ভাইরাস নয়, যেমন, Worms নামের একটি বিষয়ে আমাদের কম্পিউটারকে আক্রমণ করে যাকে আমরা ভাইরাস বলি।
আবার বর্তমানে বিশ্বের সবচেয়ে বেশি ছড়িয়ে পড়া একটি বিষয হল Trojan, বা Trojan Horse, যা এক প্রকার কম্পিউটার ভাইরাস নামে আমাদের কাছে পরিচিত। এই সকল বিষয় নিয়ে আমি এখানে কিন্তু আলোচনা করিনি।
যদি আপনাদের জানার ইচ্ছা থাকে তবে অবশ্যই নিচে কমেন্ট করে জানাবেন আমি পরবর্তীতে এই বিষয়ে আপনাদের জানানোর চেষ্টা করব। আর কম্পিউটার ভাইরাস এর বিষয়গুলি যদি ভালো লাগে অবশ্যই নিচে কমেন্ট করবেন ধন্যবাদ।
Comments 0
EmoticonEmoticon