বৈদ্যুতিক গাড়ি কিভাবে কাজ করে।
বর্তমান সময়ে আমরা খুব উন্নত পৃথিবীতে বসবাস করছি, এবিষয়ে কোনো সন্দেহ নেই। যদি মনে করি আজ থেকে কয়েকশ বছর আগের কথা তবে দেখবো সেখানে কোনো বিদ্যুৎ ছিল না, দিনের বেলা সূর্যের আলো আর রাতে চাঁদের আলোতে সেই সময়ের মানুষ কাজ করতো নিজেদের প্রয়োজন মেটাত।
আজ বর্তমান দিনে দাড়িয়ে আমরা এক জায়গা থেকে অন্য জায়গা তে যাবার জন্য গাড়ি ব্যাবহার করি, যেখানে সেই সময়কার মানুষ দিনের পর দিন পায় হেঁটে, তারপর ঘোড়ায় করে এক জায়গা থেকে অন্য জায়গা তে যাতায়াত করতো। তারপর ভারতীয় উপমহাদেশে প্রথম গাড়ির ব্যাবহার মোটামুটি ব্রিটিশদের হাতে।
ব্রিটিশদের কাছ থেকে পাওয়া সেই গাড়ি গুলি প্রথমে বাষ্প চালিত পরে ডিজেল চালিত এবং আরও পরে বর্তমান সময়ে বিদ্যুতে চালিত হয়ে উঠেছে। এতে খনিজ তেলের ব্যাবহার কমে গেছে ও ভবিষ্যতের জন্য কিছু পরিমাণ সঞ্চয় করে রাখা সম্ভব বলে অনুমান করা হয়। বর্তমানের উন্নত সময়ের চিন্তা ধারার ফসল এই বৈদ্যুতিক গাড়ি ।
সেই গাড়ির ব্যাবহার আজ এত উন্নত হয়ে উঠেছে যে গাড়িকে ব্যাবহার করতে এখন আজ কোনো জ্বালানির প্রয়োজন হয় না। এর মানে কোনো রকম জ্বালানি তেল ছাড়াই এখন খুব দ্রুত গতির গাড়ি গুলি চলতে পারে। এতে জ্বালানি ব্যাবহার করতে হয় না ঠিকই কিন্তু জ্বালানি হিসাবে ব্যাবহার হয় বিদ্যুৎ বা কারেন্ট।
বৈদ্যুতিক গাড়ি কি
বৈদ্যুতিক গাড়ি কি, একথা নতুন করে আসা করি বলার প্রয়োজন নেই, কারণ আমরা সকলেই জানি যে - বিদ্যুৎ চালিত গারিকেই আমরা বৈদ্যুতিক গাড়ি বলে জানি বা চিনি। এখন ব্যাপার হলো এখানে বিদ্যুৎ বলতে বাড়িতে যে বিদ্যুৎ দিয়ে আমরা ফ্যান বা লাইট জালিয়ে থাকি সেই বিদ্যুৎ নয়, সাধারণত এই বিদ্যুৎ হলো ব্যাটারির মাধ্যমে চালিত বা চার্জ করা ব্যাটারির মাধ্যমে প্রবাহিত বিদ্যুৎ।
একথা তো আমরা বুঝতেই পারলাম যে বিদ্যুৎ চালিত গরিকেই আমরা বৈদ্যুতিক গাড়ি বলি, কিন্তু কিভাবে এই গাড়ি যে চলে সে বিষয়ে আমাদের কাছে সঠিক ধারণা খুব কম আছে। এই কারণে বৈদ্যুতিক গাড়ি কিভাবে কাজ করে বা চলে সেই সম্পর্কে আমরা এখানে বিস্তারিত ভাবে জেনে নেবো।
বৈদ্যুতিক গাড়ি কিভাবে কাজ করে
কখনো কি আপনার মাথার মধ্যে এই ধরনের চিন্তা এসেছে যে ইলেকট্রিক গাড়ি বা বৈদ্যুতিক গাড়ি কিভাবে কাজ করে। এটি কি নরমাল ইন্টার্নাল কম্বুশান ইঞ্জিনে এর মতন কাজ করে যার মধ্যে শুধু ব্যাটারিটা কে এক্সট্রা করে যোগ করে দেয়া হয় নাকি এর পিছনে আলাদা করে কোনো মেকানিক্যল নিয়মকে কাজে লাগানো হয়।
শুনতে অদ্ভুত লাগলেও ইন্টার্নাল কম্বুশান ইঞ্জিনগুলো যেভাবে কাজ করে সেই টেকনোলজি আবিষ্কার হওয়ার কয়েক দশক আগেই ইলেকট্রিক গাড়ি টেকনোলজি আবিষ্কার হয়েছিল। 1834 সালে এক বিজ্ঞানী প্রথম বার ইলেকট্রিক গাড়ি তৈরি করেছিল আর এই গাড়িতে যে নীতি কে কাজ করানো হয়েছিল সেটি বর্তমানে বৈদ্যুতিক গাড়ি গুলোতেও ব্যবহার করা হয়।
তবে তখন সমস্যা ছিল তার গাড়িতে যে ব্যাটারি টা কে ব্যবহার করেছিলেন সেটি নন রিচার্জেবল ব্যাটারি ছিল অর্থাৎ ব্যবহারকৃত ব্যাটারিটি কে দ্বিতীয় বার ব্যবহার করার মতো সুযোগ ছিল না। অর্থাৎ ব্যাটারির পাওয়ার শেষ হওয়ার সাথে সাথে গাড়িটি পাওয়ার বা চলার ক্ষমতা শেষ হয়ে যেত। কারণ গাড়িতে ব্যবহৃত ব্যাটারির কোনভাবে চার্জ করা সম্ভব ছিল না।
আর যদি গাড়িটিকে আবার চালানোর ইচ্ছা বা প্রয়োজন হয় তবে তাকে নতুন ব্যাটারি দিয়ে চালানো সম্ভব ছিল। সুতরাং বলা যেতে পারে প্রত্যেকবার গাড়িটি ব্যবহার করার জন্য নতুন নতুন ব্যাটারির প্রয়োজন ছিল।
ডিজেল ইঞ্জিন চালিত গাড়ি গুলিতে যেমন ইন্টার্নাল কম্বুশান ইঞ্জিনে এর মধ্যে জ্বালানি ও বাতাস মিশ্রিত হয়ে অত্যন্ত চাপে তা প্রথমে অত্যন্ত চাপে সেখানে বিস্ফোরণ হতো সেই বিস্ফোরণ থেকে নির্গত শক্তি যান্ত্রিক শক্তিতে রূপান্তরিত হয় এবং এই যান্ত্রিক শক্তিকে কাজে লাগিয়ে গাড়িগুলি চলতে পারে।
আর এই কাজ যাত্রায় সম্পন্ন হয় তাহলো পিস্টন। পিস্টন লিনিয়ার মশানে থাকে আর এই লিনিয়ার মোশান কে রোটারি মোশানে পরিবর্তন করে ক্রাংকশ্যাফট। এবং এই ক্লান্তির মাধ্যমে গাড়ির চাকা কে যুক্ত করা হয়ে থাকে। সুতরাং এই যান্ত্রিক শক্তি চাকর ওপর বল প্রয়োগ করে গাড়িতে এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় নিয়ে যেতে সাহায্য করে।
তবে বৈদ্যুতিক গাড়ি যে নিয়মে কাজ করে তাকে ম্যাগনেটিজম বলা হয়। আমরা সবাই জানি চুম্বকের সমমেরু পরস্পর পরস্পরকে বিকর্ষণ করে আর বিপরীত মেরু পরস্পর পরস্পরকে আকর্ষণ করে এবার চলুন দুটো ম্যাগনেট কে ব্যবহার করে একটা এক্সপেরিমেন্ট করলে দেখা যাবে একটা চুম্বক একটা জায়গায় রাখতে হবে আর দ্বিতীয় চুম্বক টি কে নির্দিষ্ট মেরুতে মাঝ বরাবর ঝুলিয়ে দিতে হবে। এই অবস্থায় যদি এই দুটি চুম্বকের মেরু কে পাশাপাশি অবস্থান করানো যায় তবে দেখা যাবে তার সঙ্গে সঙ্গে ঝুলিয়ে দেওয়া সম্ভব বিক্ষিপ্ত হয়ে তার বিপরীত মেরু কে সেই দিকে ঘুরিয়ে নিয়ে আসবে।
এইভাবে বা এই নীতি প্রয়োগ করে চুম্বককে অর্ধবৃত্ত পর্যন্ত করানো সম্ভব সম্পূর্ণ এক পাক দেওয়া সম্ভব নয় কারণ চুম্বকের বিপরীত মেরুর কাছাকাছি আসতেই ওই গতি থেমে যাবে।। সুতরাং এই নিয়মের মাধ্যমে কোন গাড়ির চাকা কে সম্পূর্ণ করানো সম্ভব নয় তা অর্ধেক ঘুরতে সম্ভব। আর গাড়িতে এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় যেতে গেলে গাড়ির চাকা কে সম্পূর্ণ করতে হবে সুতরাং এই জায়গায় নীতির পরিবর্তন করতে হয়েছে।
এবার যে চম্বুক টিকে আমরা মাঝ বরাবর ঘুরাচ্ছিলাম সেই চুম্বক টির মেরু গুলি যদি ফিক্সড না হতো তাহলে কি হতো ! তাহলে ঐ চুম্বক টি বার বার ঘুরতে থাকতো মনে পুরোটাই ঘুরতে সে ক্ষেত্রে অর্ধেক ঘুরে থেমে যেত না। কিন্তু সমস্যা হলো আমরা যে সকল চুম্বক কে দেখে থাকি তারা ফিক্সড পোলার ম্যাগনেট।
ফিক্সড পোলার ম্যাগনেট হলো, সেই সকল চুম্বক যে গুলির মেরু নির্দিষ্ট, যাকে আর্ চেঞ্জ করা সম্ভব নয়। যেগুলো আমরা ছোটো বেলায় নিয়ে খেলা করতাম সেই ম্যাগনেট গুলিও ফিক্সড পোলার বা নির্দিষ্ট মেরুর চুম্বক।
Comments 0
EmoticonEmoticon