সাইক্লোন (Cyclone) কি ? সাইক্লোন কীভাবে ঘটে ? সাইক্লোনের এই ধরনের নামকরণের কারণ কি

 সাইক্লোন বা ঘূর্ণিঝড়, এই নামটির সাথে আমরা কমবেশি ভালোভাবে পরিচিত। যদিও কোনো না কোনো সময় আমরা ঘূর্ণিঝড় বা সাইক্লোন এর মত বিপর্যয়ের মধ্য দিয়ে সময় কাটিয়ে থাকি তাই সাইক্লোন বা  ঘূর্ণিঝড় কে আমরা খুব কাছাকাছি থেকে পর্যবেক্ষণ করেছি। কিন্তু কীভাবে এই সাইক্লোন বা ঘূর্ণিঝড় তৈরি হয় তা আজ আমরা এখানে দেখে নেব আর সাথে সাথে এটাও জেনে নেবো যে ঘূর্ণিঝড় গুলির এই ধরনের নামকরণের কারণ কি।


সাইক্লোন কি ?

  এককথায় সাইক্লোন বা ঘূর্ণিঝড় বলতে আমরা বুঝি প্রচন্ড গতিসম্পন্ন বায়ু যা ঝড়ের আকার ধারণ করে প্রচুর পরিমাণে ক্ষয়ক্ষতির সম্মুখীন করে দিতে পারে আমাদের, তাই হল ঘূর্ণিঝড় বা সাইক্লোন। উপরের বিষয়টি পড়লে সাইক্লোন এর ধারণা পাওয়া যায় কিন্তু সাইক্লোন কি সে বিষয়টি সম্পূর্ণ ভাবে অনুধাবনযোগ্য হয়ে ওঠে না। তাহলে এবার আমরা দেখে নেবো যে আসলে সাইক্লোন কি।


  মহাসাগরের উপর হঠাৎ করে নিম্নচাপ অঞ্চল সৃষ্টি হওয়ার ফলে সেখানে উচ্চচাপ যুক্ত অঞ্চলের বাতাস ছুটে আসে ওই স্থানকে পরিপূর্ণ করে তোলার জন্য। বাইরে থেকে আসা এই বাতাস যখন ওই স্থানে অবস্থান করে তখন পূর্বের গতির জন্য বর্তমানের গতিশীল অবস্থাকে আরো জোরালো করে তোলে, এর ফলে বাতাস এর ঘূর্ণন অবস্থা প্রচন্ড তীব্রতর হয়ে দেখা দেয়, এর ফলে সৃষ্টি হয় সাইক্লোন বা ঘূর্ণিঝড়। মহাসাগরের উপর গড়ে ওঠা এই শক্তিশালী বায়ুর ঘূর্ণন অবস্থা ধীরে ধীরে স্থলভাগের উপরে উঠে আসে। 


  তাহলে সাইক্লোন বা ঘূর্ণিঝড় কি তা আমরা উপরে বোঝার চেষ্টা করেছি কিন্তু এই সাধারণ ধারণাটিকে আরো ভালোভাবে বুঝতে গেলে আমাদের জানতে হবে যে এই সাইক্লোন / ঘূর্ণিঝড় কিভাবে সংঘটিত হয় অর্থাৎ সাইক্লোন কিভাবে ঘটে !


সাইক্লোন কিভাবে ঘটে ?

   সাধারণত সাইক্লোন বা ঘূর্ণিঝড় পৃথিবীর মহাসাগরীয় অঞ্চলে গড়ে ওঠে এর কারণ হলো সাইক্লোন করে উঠতে গেলে যে কয়েকটি বিষয় অত্যন্ত জরুরী তারমধ্যে সবগুলি মহাসাগরীয় অঞ্চলে বিরাজ করে এই কারণে বেশিরভাগ বা প্রায় সকল ঘূর্ণিঝড় গুলি মহাসাগরে গড়ে ওঠে ও কখনো তা মহাসাগরে বিলিয়ে যাই কখনো বা স্থলভাগের উপর আছড়ে পড়ে বিলীন হয়।Telugu Movie Review


  সাইক্লোন বা ঘূর্ণিঝড় সৃষ্টি হতে গেলে কমপক্ষে দেড়শ থেকে দুইশ বর্গ কিলোমিটার বিস্তীর্ণ এলাকা প্রয়োজন হয় যেখানে সূর্যের তাপে গড় তাপমাত্রা পরিমাণ হবে মোটামুটি 30 ডিগ্রি সেন্টিগ্রেড এর আশেপাশে। আর এই ধরনের বিস্তীর্ণ এলাকা একমাত্র মহাসাগরের উপর এই দেখা যায়। তবে এক্ষেত্রে একটা কথা মনে রাখা দরকার সাইক্লোন এর বিস্তার 500 থেকে 600 বর্গমিটার স্থানজুড়ে হতে পারে।


   বেশিরভাগ সাইক্লোন বা ঘূর্ণিঝড় গুলি বিষুব অঞ্চল বা নিরক্ষীয় অঞ্চলে সংঘটিত হয় এর কারণ হলো - সাইক্লোন সৃষ্টি হতে গেলে সংশ্লিষ্ট অঞ্চলের বায়ুমন্ডলে উপর একটি নিম্নচাপ কেন্দ্র সৃষ্টি হতে হয় আর বাতাসের নিম্নচাপ সৃষ্টি হতে গেলে প্রয়োজন গড় 25 থেকে 30 ডিগ্রি সেন্টিগ্রেড তাপমাত্রা। পৃথিবীর বায়ুচাপ ও তাপ বলয় গুলির মধ্যে একমাত্র নিরক্ষীয় অঞ্চলে এই ধরনের তাপমাত্রা দেখা যায়। এই কারণে বেশিরভাগ ঘূর্ণিঝড় বা সাইক্লোন গুলির উৎপত্তি নিরক্ষীয় অঞ্চলে।


  উপরে মোটামুটি যে সকল বিষয় গুলি একটি সাইক্লোন বা ঘূর্ণিঝড় তৈরি হতে গেলে প্রয়োজন সেগুলি নিয়ে বলা হলো এবার দেখে নেবো যে এই বিষয়গুলি কিভাবে একটি সাইক্লোন / ঘূর্ণিঝড়ের সৃষ্টি করে !


ঘূর্ণিঝড় সৃষ্টির প্রক্রিয়া 

   সমুদ্রের উপরে একটি বিস্তীর্ণ এলাকায় প্রচন্ড উত্তাপ হওয়ার ফলে সেখানকার জল বাস্পে পরিণত হয় ও সাথে সাথে সংলগ্ন বায়ুমণ্ডল উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। আমরা জানি কোন স্থানের বায়ু উত্তপ্ত হলে তা ধীরে ধীরে উপরের দিকে উঠে যায়, কারণ হালকা হয়ে যায়, সাথে সাথে এই ধরনের বায়ু প্রচন্ড জলীয়বাষ্প ধারণে সক্ষম হয়ে থাকে। 

সাইক্লোন (Cyclone) কি
Kivabe.In/Cyclone


  বিস্তীর্ণ অঞ্চল এর বাতাস জলীয় বাষ্পপূর্ণ ও হালকা হয়ে একটি উষ্ণতা নিয়ে উপরের দিকে অবস্থান করে কিন্তু ওই বিশাল এলাকা হঠাৎ করে বায়ুশূন্য হয়ে যাওয়ার ফলে নিম্নচাপের সৃষ্টি করে। আর একটি সাইক্লোন সৃষ্টি হওয়ার পিছনে এটি হলো প্রধান এবং প্রথম ঘটনা। যেহেতু ওই বিশাল অঞ্চলটি বায়ুশূন্য রূপে অবস্থান করে এই কারণে মেরু অঞ্চলের দিক থেকে অর্থাৎ উচ্চচাপ যুক্ত অঞ্চল থেকে অপেক্ষাকৃত শীতল বায়ু ওই নিম্নচাপ অঞ্চলের দিকে প্রবল গতিতে ছুটে আসে।


   মেরু অঞ্চলের শীতল বায়ু যখন ওই নিম্নচাপ অঞ্চলে ছুটে আসে তখন প্রচুর জলীয় বাষ্প বহন করে নিয়ে আসে এবং ওই স্থানে এসে আবার উষ্ণ হয়ে পড়ে এর ফলে ওই সকল বাতাস এক ধরনের আয়ন গ্রহণ করে নিজের ভিতর গতির সৃষ্টি করে। আমরা জানি বাষ্পের গতি বা বল কতখানি।


  ওই নিম্নচাপ যুক্ত অঞ্চলে প্রচন্ড বাষ্প যুক্ত বাতাস ধীরে ধীরে প্রবল গতিসম্পন্ন হয়ে ওঠে ও আশেপাশের থেকে আরো বাতাস ছুটে এসে একটি কেন্দ্র বিন্দুতে মিলিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে। মনে রাখতে হবে একটি সাইক্লোন এর এই সকল প্রক্রিয়া গুলি যে গতির ফলে ঘটে সেই গতির সৃষ্টি হয় সমুদ্রের জল যখন বাষ্পে রূপান্তরিত হয় সেই বাষ্পের কারণে।


  একবার ওই নিম্নচাপ অঞ্চলে এই ধরনের গতি সৃষ্টি হয়ে গেলে উষ্ণতার কারণে প্রতি মুহূর্তে সেখানে বাষ্পের সৃষ্টি হয় ও ধীরে ধীরে ওই সাইক্লোন এর গতি বৃদ্ধি পায় এ কারণে একটি সাইক্লোন / ঘূর্ণিঝড় যতক্ষণ সমুদ্র এর মধ্যে অবস্থান করে ততক্ষণ জলীয় বাষ্পের অভাব বোধ না করার জন্য গতি বাড়তে থাকে।


  তারপর যখন ওই সাইক্লোন নিকটবর্তী কোন স্থলভাগের উপর এসে পড়ে তখন ধীরে ধীরে জলীয় বাষ্পের সৃষ্টির প্রক্রিয়া কম হয়ে যায় বলে তা গতি হারাতে থাকে ও ধীরে ধীরে একসময় বিলীন হয়ে যায়। 


   যেহেতু সাইক্লোন ঘূর্ণিঝড় বাতাসের একটি ঘূর্ণন প্রক্রিয়া তাই এর একটা কেন্দ্রবিন্দু থাকে যাকে আমরা সাইক্লোনের চোখ বলে জেনে থাকি। একটি মজার বিষয় হলো সাইক্লোনের কেন্দ্রবিন্দু বা চোখ অঞ্চলে বাতাসের তেমন কোন গতি অনুভূত হয় না যেখানে বাইরের দিকের গতি থাকে 100 থেকে 200 কিলোমিটার পার ঘন্টা।


  সমুদ্রের মধ্যে এই ধরনের বাতাসের ঘূর্ণন গতির সৃষ্টি হলেই যে তাকে সাইক্লোন বলা হবে এমন কোন কথা নয়, যদি সৃষ্টি হওয়া ঘূর্ণন বাতাসের গতি 62 কিলোমিটার এর বেশি হয় তবে তাকে ঘূর্ণিঝড় বলা হয়। 115 কিলোমিটার এর বেশি গতিসম্পন্ন ঘূর্ণিঝড় কে তীব্র ঘূর্ণিঝড় বলা হয়। 180 কিলোমিটার এর বেশি গতিসম্পন্ন কে প্রবল ধ্বংসাত্মক ঘূর্ণিঝড় বলা হয়। আর যদি ওই বায়ুর গতি 62 কিলোমিটার এর কম হয় তবে তাকে মৌসুমী ঝড় বলা হয়।


  এই ধরনের সাইক্লোন বা ঘূর্ণিঝড় গুলির সৃষ্টি হওয়ার স্থান অনুযায়ী এদের আলাদা আলাদা নামকরণ করা হয়েছে - ভারত মহাসাগর ও দক্ষিণ প্রশান্ত মহাসাগরে নাম সাইক্লোন, দক্ষিণ চীন সাগরে এর নাম টাইফুন, আবার আমেরিকার আশেপাশে গঠিত সাইক্লোন এর নাম টর্নেডো টর্নেডো একটি প্রবাল গতিসম্পন্ন ঘূর্ণিঝড় যা ধ্বংসাত্মক রূপ নিয়ে থাকে। 


👉  ভারত মহাসাগরে উৎপন্ন 1970 সালের ফাইলিন ছিল সব থেকে তীব্রতর ও ভয়ঙ্কর ঘূর্ণিঝড় যার প্রতি ঘণ্টায় গতিবেগ ছিল 180 কিলোমিটার এর উপর। এর ফলে প্রায় 5 থেকে 6 লক্ষ মানুষের জীবন হানি হয়েছিল।Telugu Movie Review


  তাহলে সাইক্লোন কি এবং সাইক্লোন কিভাবে ঘটে সেই সকল বিষয় গুলি আমরা বিস্তারিত জেনেছি। কিন্তু আরেকটি কথা আমাদের আগ্রহের বিষয় যে সাইক্লোন / ঘূর্ণিঝড় গুলির এই ধরনের নামকরণের কারণ কি এর নাম গুলি কারা দিয়ে থাকে।


সাইক্লোনের নামকরণের কারণ 

  প্রায় প্রতি বছরে আমরা কোন না কোন সাইক্লোন বা ঘূর্ণিঝড়ের সম্মুখীন হয়ে চলেছি। আর প্রতিবছর সৃষ্টি হওয়া এই সাইক্লোন গুলির নাম একই থাকে না তা আলাদা আলাদা হয়। এই কারণে নিশ্চয়ই আমাদের মনে প্রশ্ন জেগেছে যে কেন এরকম নাম হয় এবং এই নাম গুলি কারা দিয়ে থাকে।


  এই নামগুলি দেওয়ার জন্য একটি আলাদা আলাদা মহাসাগরীয় অঞ্চলের কিছু নির্দিষ্ট দেশগুলিকে মিলিত করে একটি সংস্থা গঠন করা হয়। আর ওই মহাসাগরীয় অঞ্চলে যে সকল সাইক্লোন সংঘটিত হয় তা ওই দেশগুলির নির্ধারিত করে দেওয়ার নামের হিসেবে নামকরণ হয়।


  যেমন ভারত মহাসাগরীয় অঞ্চলের অবস্থিত 13 টি দেশ মিলিত হয়ে একটি সংস্থা গঠন করেছে এবং এই 13 টি দেশ প্রত্যেকে একটি করে নাম আগে থেকে নির্দিষ্ট করে দেয় আর সেই নাম গুলো দিয়ে একটি তালিকা তৈরি করা থাকে আগের থেকে। যেমন 2021 সালে ঘটে যাওয়া Yaas ঘূর্ণিঝড় এর পরে যদি কোন ঘূর্ণিঝড় সৃষ্টি হয় তবে তার নাম কি হবে তা আগে থেকেই পরপর লিস্ট করা আছে।

সাইক্লোনের নামকরণের কারণ
Kivabe.In/Cyclone-Strom


  আর এই লিস্ট তৈরি করেছে ভারত মহাসাগরে অবস্থিত 13 টি দেশ এবং এর পরবর্তী ঝড় গুলির নাম কি হবে তারও নামকরণ অনেক আগে থেকেই নির্ধারণ করা হয়ে যায়।


👉👉  আশাকরি সাইক্লোন সম্পর্কিত সমস্ত তথ্যগুলি জানাতে সমর্থ হয়েছি যেখানে আলোচনা করা হল সাইক্লোন কি কিভাবে সাইক্লোন ঘটে বিভিন্ন মহাসাগরে অবস্থিত সাইক্লোন গুলি এবং সাইক্লোন এর নামের কারণগুলি সম্পর্কে। আমাদের এই ওয়েবসাইটটিতে বিভিন্ন ধরনের প্রযুক্তিগত দিক নিয়ে আলোচনা করা হয় যদি এছাড়া আপনার অন্য কোন বিষয়ে জানতে ইচ্ছা হয় অবশ্যই নিজের কমেন্ট করে জানাতে পারেন এছাড়া অন্যান্য বিষয় গুলি নিচের থেকে দেখে নিতে পারেন - 


READ MORE