পৃথিবী কেন জোরে ঘুরতে শুরু করেছে | পৃথিবীর গতি বৃদ্ধি পাওয়ার কারণ | Earth Rotation Speed

    সম্প্রতি ২০২২ সালের জুলাই মাসের এক গবেষণাপত্রে প্রকাশিত তথ্য দেখে অনেক বিজ্ঞানী এবং পৃথিবীবাসীর চক্ষু চড়ক গাছ। গবেষণায় জানা গেছে পৃথিবী নাকি তার নিজের ঘূর্ণন গতির গতিবেগ বাড়িয়েছে অর্থাৎ এখন একদিন হতে ২৪ ঘন্টার ও কম সময় লাগছে। 

   এই কথা শুনে আমাদের খানিকটা মজাদার লাগলেও বিষয়টি যে মোটেও মজাদার নয় তা আমরা অনুমান করতে পারি এই তথ্য থেকে এটুকু বুঝতে পারি যে পৃথিবী তার নিজস্ব ধর্ম নিজে নিজেই পরিবর্তন করছে এর ফল যে কি হতে পারে তা আমরা অনুমান করতে পারি।

Earth Rotation Speed
Earth Rotation Speed


   পৃথিবীর এই গতি বৃদ্ধির কারণ এবং হঠাৎ কেনইবা পৃথিবী তার এই গতি বৃদ্ধি করেছে ! কেন ২৪ ঘন্টার বদলে আরো কম সময় পৃথিবী নিজের মেরুদন্ডের উপর ঘুরছে তা আমরা আজ আলোচনা করব।

পৃথিবী কেন জোরে ঘুরতে শুরু করেছে

   যদি কেউ আপনাকে জিজ্ঞাসা করে পৃথিবী নিজে এক পাক ঘুরতে কত সময় লাগে এর উত্তর খুব সহজেই আমরা বলতে পারব তাহলো ২৪ ঘন্টা। 

   কিন্তু ২৯ শে জুন ২০২২ সালে পৃথিবীর ইতিহাস পরিবর্তন হয়েছে, কারণ এই দিন নাকি পৃথিবী ২৪ ঘন্টার পরিবর্তে অনেক কম সময়ে তার রোটেশন সম্পূর্ণ করেছে।

    যা দেখে বিজ্ঞানী মহল হতভম্ব হয়েছে এবং আলোচনা শুরু হয়েছে যে তাহলে কি পৃথিবীর ধ্বংস নিশ্চিত ? আর কতদিনই বা পৃথিবী 24 ঘন্টায় নিজের উপর এক বার রোটেশন সম্পন্ন করবে।

   বেশ কিছু বছর থেকেই বিজ্ঞানীরা লক্ষ্য করছিল পৃথিবীর গতি বেশ বাড়তে শুরু করেছে। আর এর ফলে পৃথিবী নাকি ২৪ ঘন্টার আগেই তার অক্ষরেখার উপর একবার রোটেশন কমপ্লিট করে ফেলছে।

   কিন্তু মূল সমস্যা হল কেন পৃথিবী এরকম আচরণ করছে তার কোন সৎ উত্তর বিজ্ঞানীদের মাথায় নেই। 

   তবে মহাকাশ বিজ্ঞানী এবং পদার্থবিজ্ঞানীরা কিছু থিওরির উপর নির্ভর করে পৃথিবীর এই গতি বেড়ে যাওয়ার কারণ কে বেশ সুন্দরভাবে ব্যাখ্যা করেছেন , এই সকল কারণগুলির মধ্যে অন্যতম এবং গ্রহণযোগ্য একটি কারণ হলো ক্লাইমেট চেঞ্জ অর্থাৎ আবহাওয়ার পরিবর্তন।

   বিগত পঞ্চাশ বছর ধরে পৃথিবীতে উন্নত দেশগুলি তাদের নিজস্ব ক্রিয়া-কলাপের ফলে বায়ুমণ্ডলের উষ্ণতাকে বাড়িয়ে ফেলেছে, আর এর ফলে পৃথিবীর দুই মেরুতে জমে থাকা বরফ ধীরে ধীরে গলতে শুরু করেছে। 

    যেহেতু পৃথিবীর এই দুই মেরুতে সঞ্চিত এই বরফ আমাদের প্রসারিত দুটি হাতের মতন অর্থাৎ আমরা যদি হাতকে প্রসারিত করি তাহলে যেমন দেহ থেকে তার বিস্তার বাইরের দিকে চলে যায় পৃথিবীর এই দুই মেরুতে সঞ্চিত বরফের বিশাল আকারের স্তর গুলি এরকম পৃথিবীর আয়তন ছেড়ে বাইরের দিকে চলে যায়।

   কিন্তু আবহাওয়া চেঞ্জ বা পরিবর্তন হওয়ার ফলে এই দুই প্রান্তের বরফ গলে জল হতে শুরু করেছে এবং এই বিশাল বরফের আয়তন কমে তা জলে পরিণত হয়ে পৃথিবীর কেন্দ্রের দিকে আসতে শুরু করেছে।

    বিষয়টিকে যদি পদার্থ বিজ্ঞানের মতনকরে বলা হয় তবে দাঁড়াবে এরকম - দুই মেরুর থেকে ভর ধীরে ধীরে পৃথিবীর কেন্দ্রের দিকে অবস্থান করতে শুরু করেছে। ঠিক বিষয়টিকে বুঝতে গেলে এইভাবে বুঝতে হবে যদি আপনি দুটি হাত প্রসারিত করে থাকেন তাহলে পৃথিবীর পূর্ব অবস্থা আর বর্তমানে বরফ গলে যাওয়ার কারণে যে অবস্থায় দাঁড়িয়েছে তা হল আপনি যদি হাত দুটিকে আপনার দেহের সঙ্গে লাগিয়ে রাখেন।

   এখন মাথায় প্রশ্ন আসতে পারে তার ফলে কি করে পৃথিবীর নিজের গতিবেগ বাড়তে পারে, চলুন এবার সেই সমস্যার সমাধানে যাওয়া যাক।


    পদার্থবিজ্ঞানের তথ্য অনুসারে কোন ঘূর্ণনশীল বস্তুর বাইরের দিকের অংশ যত বেশি প্রলম্বিত বা দীর্ঘ থাকে তার ঘূর্ণন গতিবেগ ততো বেশি কম হয় অর্থাৎ ভাবুন পৃথিবীর এই দুই প্রান্তে বরফ পুঞ্জিত আকারে থাকার জন্য তার গতিবেগ সবসময়ই বাধা পেতো।

    ঠিক আপনি যদি কোন ঘূর্ণনশীল বস্তুর উপরে এক জায়গায় পা দিয়ে দাঁড়িয়ে হাত দুটিকে প্রসারিত করে দেন তবে আপনার ঘুন্নন গতিবেগ যা থাকবে যদি আপনি আপনার হাত দুটি দেহের সঙ্গে লাগিয়ে সেই ঘুন্ননশীল বস্তুর উপর দাঁড়িয়ে থাকেন তবে আপনার এখনকার গতিবেগ পূর্বের গতিবেগের তুলনায় বেশি হবে।

   আশা করি এই প্রক্রিয়াটি আপনি উপলব্ধি করতে পেরেছেন পৃথিবীর ক্ষেত্রে এই একই জিনিস হয়েছে যেহেতু দুই প্রান্তের গলিত বরফের জল কেন্দ্রের দিকে অবস্থান করছে সুতরাং এর কেন্দ্রে ভর বেড়ে যাওয়ায় পৃথিবীর পূর্বের তুলনায় এর গতিবেগ কিছুটা বেড়েছে।

   এবার আসি পৃথিবীর গতিবেগ কতটা বেড়েছে আর একদিন হতে কতটা কম সময় লাগছে বর্তমানে পৃথিবীর । - ২৯ শে জুন 2022 সালে পৃথিবীর একদিন বা একবার রোটেশন কমপ্লিট করতে চব্বিশ ঘন্টার থেকে ১.৫ মিলি সেকেন্ড কম সময় লেগেছিল। 

   এবার আপনি এটা দেখে হয়তো ভাবতে পারেন যে এত কম সময় কিন্তু এটুকু ভাবা প্রয়োজন পৃথিবীর দুই মেরু প্রান্তের বরফ যত গলে জলে পরিণত হবে এবং তা কেন্দ্রের দিকে অবস্থান করবে পৃথিবীর এই ঘূর্ণন গতি ক্রমশ বাড়তে থাকবে এবং সাথে সাথে এই কেন্দ্রের দিকে অবস্থিত সমস্ত মহাদেশ এবং দেশগুলির পার্শ্ববর্তী মহাসাগরের জলসীমা বাড়তে থাকবে এবং নিচু অঞ্চলগুলি প্লাবিত হয়ে তার সাগরের মধ্যে অবস্থান করবে।